ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায়

 

ডায়াবেটিস মেলাইটাস এক মরণঘাতি রোগ যা এমনভাবে বর্তমান সময়ে প্রতিটি পরিবারে প্রবেশ করেছে যে একে নতুন করে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মত তেমন কিছুই নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য "ডায়াবেটিস একটি মহামারী রোগ।" কারণ এই রোগের অত্যাধিক বিস্তৃতির কারণেই এমন ঘোষণা দিয়েছে "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা" বা "WHO" (World Health Organization) .

digital-dream-it

ডায়াবেটিস এমন এক মরণঘাতি রোগ যা আপনার যে কোন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে নিষ্ক্রিয় করতে মোক্ষম ভূমিকা পালন করে। আর এমন এক মরণঘাতী রোগ থেকে আপনাদেরকে সতর্ক করতে আজকের এ আর্টিকেলটি লিখা আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি আপনি ডায়াবেটিস রোগ সম্বন্ধে একটি সঠিক ধারণা পাবেন এবং ডায়াবেটিক রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন। ডায়াবেটিস: কি, প্রকার, লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচীপত্রঃ  ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়

ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায়:- 


ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায় সম্বন্ধে জানার আগে অবশ্যই ডায়বেটিস রোগ সম্বন্ধে আমাদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা উচিত বলে মনে করি। এই প্রবন্ধে আপনি জানতে পারবেন ডায়াবেটিস মেলাইটাস কি, প্রকারভেদ, ইনসুলিনের কাজ, উপসর্গলক্ষণ সমূহ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে কারা রয়েছেন, ডায়াবেটিস হলে এর জটিলতা কি, কিভাবে রোগ নির্ণয় করতে হবে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কি করনীয়, ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে কি করনীয়, পৃথিবীতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা কেমন এবং ডায়াবেটিস নরমাল লেভেল সম্বন্ধেও বিস্তারিত জানতে পারবেন। 

আর এ বিষয়গুলো সম্বন্ধে আপনার সঠিক ধারণা থাকলে আপনি আপনার নিজেকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারবেন বলে আশা করি। ডায়াবেটিসের নরমাল লেভেল জানা থাকলে আপনি আপনার নিজে নিজেকে আরো বেশি সচেতন করতে পারবেন। যেহেতু রোগ আপনার সুতরাং সে সম্বন্ধে আপনার নিজের সঠিক ধারণা থাকা অতীব জরুরী । আর ডায়াবেটিসের মত এমন আত্মঘাতী এক রোগ সম্বন্ধে সচেতন করতেই আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবেন যেভাবে তারও একটি সঠিক গাইডলাইন পেয়ে যাবেন আজকের এই আর্টিকেলে।

ডায়াবেটিস মেলাইটাস কি?


ডায়াবেটিস মেলাইটাস বা বহুমূত্র রোগ হল মানব দেহের জন্য গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদি একটি অবস্থা। যখন আমাদের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে মানবদেহে যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয় বা উৎপাদিত ইনসুলিন স্বাভাবিক বা সঠিকভাবে মানবদেহে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে না সেই অবস্থাকেই ডায়াবেটিস মেলাইটাস বলে। 

বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যা বর্তমান চিকিৎসা জগতকে বেশ গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। আর তাই এমন ভয়াবহ রোগ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবেন যেভাবে এর সঠিক গাইডলাইন দিতেই আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা। আশা করি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে পড়ে আপনি আপনার মূল্যবান মতামত দিবেন।

মানব দেহে ইনসুলিনের কাজ কি ?


মানব দেহে ইনসুলিনের কাজ কি তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে মূলত ইনসুলিন কি ? ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন যার কাজ মানবদেহের বিভিন্ন কোষে গ্লুকোজকে পৌঁছে দেয়া ।ইনসুলিন অগ্নাশয়ের বিশেষ কোষ দ্বারা তৈরি হরমোন আই-লেটস থেকে তৈরি হয়ে থাকে। সাধারণত আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি তখন তা ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত হয়ে থাকে। অতঃপর এই গ্লুকোজকে ব্যবহার করে মানবদেহ শক্তি সঞ্চার করে।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ


ডায়াবেটিস মেলাইটাস মূলত চার প্রকার যথা :-

  • টাইপ ১
  • টাইপ ২
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মেলাইটাস 
  • ম্যাচিউরিটি অনসেট ডায়াবেটিস মেলেইটাস অফ দে ইয়ং

টাইপ ১ ডায়াবেটিস মেলাইটাস

টাইপ ১ ডাইবেটিসের ক্ষেত্রে অগ্নাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে এক্ষেত্রে রোগীর শরীর আর কোন ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। সাধারণত ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস দেখা যায়। এ সকল রোগীদের ইনসুলিন নিতেই হয়। নতুবা রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে অতি দ্রুত রক্তে অম্লজাতীয় বিষক্রিয়াই অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকেন।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলাইটাস

যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম করেন না এরাই মূলত টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী। এ ধরনের রোগী  সাধারণত মোটাসোটা বা স্থূলকার হয়। এদের বয়স সাধারণত ৩০ বছরের বেশি হয়ে থাকে। এ ধরনের রোগীরা ইনসুলিন নির্ভরতা নয় বরং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট। 

টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন তৈরি করতে পারে তবে তার প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য বা যা তৈরি হয় তা শরীরে ব্যবহারে অকার্যকর বা ব্যর্থ হয়। নিয়মিত ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এর মাধ্যমে প্রথমত টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় । অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ বা ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়। 

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে যে সকল খাবার পরিহার করতে হবে 

  • মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার বা পানীয় 
  • ফ্যাট বা চর্বিযুক্ত খাবার 
  • ঝুঁকি বাড়ায় >সেচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট ,সাদা ভাত ইত্যাদি
  • ঝুঁকি কমায় >পলি আনস্যাচুরেটেড ও মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট 
গর্ভকালীন বা মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস মেলাইটাস
কোন মহিলা যখন সন্তান-সম্ভাবনা বা গর্ভধারণ করেন তখন তার নিজের ও সন্তানের জন্য যতটুকু ইনসুলিন প্রয়োজন ততটুকু ইনসুলিন তৈরি করতে না পারাকে মাতৃত্বকালীন বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলে। একে জস্টেশনাল ডায়াবেটিসও বলে। সাধারণত গর্ভধারণের সময় যে ডায়াবেটিস হয় সেটাই জস্টেশনাল ডায়াবেটিস। বিশ্বের বিশেষ কিছু কিছু এলাকার লোকজন এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সম্ভাবনা অনেক বেশি তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম।


মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস সাধারণত সন্তান প্রসবের পর আর থাকে না। তবে অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলার ডায়াবেটিস গর্ভবতী নারী ,প্রসূতি বা সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু যে কাউকেই বিপদের সম্মুখীন করতে পারে। এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গর্ভকালীন অবস্থাতেই রোগীকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ বা ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজনও হতে পারে।

ম্যাচিউরিটি অনসেট ডায়াবেটিস অফ দা ইয়ং

এটি টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যগুলোকে নির্দেশ করা এক বিরল জেনেটিক ফর্ম এবং ল্যাটেন্ট অটো ইমিউনো ডায়াবেটিস (LADA)। যা ১.৫ ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। LADA আক্রান্ত ব্যক্তিরা টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ এবং উপসর্গের সাথে উপস্থিত হতে পারে যা LADA নির্ণয় করা আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। 

সাধারণত ৩৫ বছর বয়সের পরে প্রাপ্তঃবয়স্কদের প্রভাবিত করে থাকে। অন্যান্য বিরল ফর্ম গুলোর মধ্যে রয়েছে নবজাতক ডায়াবেটিস > সাধারণত ৬ মাস বয়সীদের মধ্যে এটি নির্ণয় করা হয়ে থাকে। এছাড়াও প্যানক্রিয়েটাইটিস বা সিস্টিক ফাই-ব্রোসিসের অবস্থার কারণে অগ্নাশয়ের ক্ষতির কারণে টাইপ 3C ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।

আর এই সকল প্রকার ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবেন যেভাবে তার সঠিক গাইডলাইন পেয়ে যাবেন এই আর্টিকেলে।

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট বলতে কি বোঝায় ?


ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট বলতে কি বোঝায় এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। ইনসুলিন কেন দেয়া হয় সে সম্পর্কে তার ধারণা সুস্পষ্ট হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন দিলে ইনসুলিন নিতে চান না। 

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট মূলত মানবদেহের শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় কিন্তু তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনা। অর্থাৎ শরীরে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সঠিকভাবে কমাতে ব্যর্থ হয়। কোন ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হলে পরবর্তীতে তার টাইপ টু ডায়াবেটিস হয়।

সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গসমূহ

মানবদেহের রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ডায়াবেটিসের ধরন অনুসারে লক্ষণ গুলো বিভিন্ন জনে বিভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু লক্ষণগুলো হলো
  • তৃষ্ণা বৃদ্ধি একে মেডিকেল ভাষায় পলিডিপসিয়া (Polydipsia) বলে।
  • ক্ষুধার চাহিদা বেড়ে যাওয়া একে মেডিকেল ভাষায় পলিফেজিয়া (Polyphagia) বলে।
  • ঘন ঘন প্রসাব। দিনে ৮ বার বা রাতে ঘুমানোর মাঝে একবারের বেশি প্রয়োজন হয় । একে মেডিকেল ভাষায় পলি ইউরিয়া (Polyuria) বলে।
  • ক্লান্তিবোধ ও ঘুম ঘুম বা ঘোর ঘোর ভাবা আশা
  • চোখে কম দেখা 
  • ওজন কমে যাওয়া 
  • মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া।
  • চামড়ায় শুষ্ক খসখসে ও চুলকানি ভাব বৃদ্ধি পাওয়া।
  • বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
  • ক্ষত নিরাময় বা ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় নেয়া
  • হাত বা পায়ে অসাড়তা বা শিহরণ অনুভূতি
  • ত্বক বা জেনেটিক অঙ্গে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘন ঘন বা বারবার হওয়া 
  • গর্ভাবস্থায় সাধারণত লক্ষণ গুলো তেমন প্রকাশ পায় না। গর্ভধারণের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহে ডাক্তারগন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে দেন
  • প্রদাহ জনিত রোগে বারবার আক্রান্ত হওয়া
  • এছাড়াও আরো একটি স্বতন্ত্র লক্ষণ হল ঘাড় ,কুঁচকি ,বগলের চারপাশের ত্বক কালো হয়ে যাওয়া

যারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন


যারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের মধ্যে নিম্নলিখিত কারণ সমূহ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় :-
  • প্রসাব করার প্রয়োজনীয়তা হঠাৎ ও প্রবাল ভাবে আসে যার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে 
  • ৪০ বছর বয়সে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার লোকজনের মধ্যে ২৫ বছর বয়সেও টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে।
  • যাদের পিতা-মাতা ,ভাই বোনের ডায়াবেটিস আছে তারা জেনেটিক ভাবে যে কোন বয়সেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন বা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
  • বয়স ও একটা প্রধান ফ্যাক্টর। বয়স ৩০ এরপরে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সব থেকে বেশি থাকে
  • উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও মদ্যপান ডায়াবেটিসের জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায় 

ডায়াবেটিসের জটিলতা


ডায়াবেটিসের জটিলতা নানাবিধ। তবে আজ আমরা প্রধান সমস্যা গুলো নিয়ে আলোচনা করব। যদি আপনি দীর্ঘদিন যাবৎ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে  স্থায়ী হয়ে থাকেন তবে আপনি অবশ্যই গুরুতর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা জটিলয়তায় ভুগছেন। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা গুলো হল 
  • চোখের সমস্যা চোখে কম দেখা বা ঝাপসা দেখা। এমনকি চোখে ছানিও পড়তে পারে। একে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বলে ।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা বডি ইমিউনিটি কমে যায়। ফলে যে কোন রোগে সংক্রমণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।
  • স্নায়ু চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয় একে নিউরোপ্যাথি বলে।
  • ডায়াবেটিস নেপ্রোপ্যাথি বা কিডনির সমস্যা , দীর্ঘমেয়াদী  উচ্চ শর্করা ও উচ্চ রক্তচাপের  কারণে হতে পারে।
  • রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে রক্তনালীর ক্ষতি হয়। রক্তে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে হার্ট এটাক বা স্ট্রোকের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়।
  • স্নায়ুর ক্ষতিতে পায়ের সংবেদন লোপ পায়। ফলে পায়ে ব্লাড চলাচল ও কমে যায়। এক পর্যায়ে পায়ে কোন ক্ষত বা ইনফেকশন হলে তা সারতে প্রচুর সময় নেই। অনেক সময় অঙ্গ হানির ঘটনাও ঘটে থাকে। 
  • মাড়ির রোগ বা মুখের অন্যন্য সমস্যাও হতে পারে।
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যৌন সমস্যা ও নির্দিষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকেন।

ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় পদ্ধতি


ডাক্তারগন ডায়াবেটিস ,প্রি-ডায়াবেটিস এবং গর্ভকালীন ডায়বেটিস নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের রক্ত পরীক্ষা করে থাকেন এ পরীক্ষাগুলো আপনার রক্তের গ্লুকোজ লেবেল পরিমাপ করার জন্যই ব্যবহৃত হয়। ডায়াবেটিস কি, কেন হয় ? ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
  • FBS >> ফাস্টিং ব্লাড সুগারঃ সাধারণত এ পরীক্ষা সকালে খালি পেটে করা হয়ে থাকে এজন্য আপনাকে কমপক্ষে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে।
  • FPG >> ফাস্টিং প্লাজমা গ্লুকোজঃ এ পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে কমপক্ষে চার ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে।
  • HbA1c >> হিমোগ্লোবিন এ ওয়ান সিঃ পরীক্ষার মাধ্যমে গত তিন মাসের গড় গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
  • RBS >> রেনডম ব্লাড সুগারঃ তাৎক্ষণিক ব্লাড সুগার চেক করার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। 
  • OGTT >> ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্টঃ এ টেস্ট করার জন্য কমপক্ষে ৮ ঘন্টা না খেয়ে থাকবেন। প্রথমবার স্যাম্পুল দেয়ার পর ৭৫ মিলিগ্রাম গ্লুকোজ ২00 থেকে ৩00 মিলিলিটার পানিতে গুলিয়ে খাবেন। অতঃপর দুই ঘন্টা পরে পুনরায় স্যাম্পল দিবেন এই দুই ঘন্টা আপনি পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন হাঁটাচলা বা অন্য কোন কিছু খাওয়া যাবে না এমনকি সিগারেটও নয়।  এক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা টেস্ট দেয়ার আগের তিনদিন আপনি স্বাভাবিক খাবার দাবার খাবেন । এই টেস্টের রিপোর্ট আপনার গত দুই - তিন মাসের গ্লুকোজের একটি গড় রিপোর্ট দেখাবে।
  • 2HABF>>টু আওয়ার আফটার ব্রেকফাস্টঃ সকালে নাস্তার দুই ঘন্টা পরে আপনার গ্লুকোজ লেবেল কেমন থাকে তা দেখার জন্য এ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
  • 2HAL >> টু আওয়ার আফটার লাঞ্চঃ দুপুরে খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে আপনার গ্লুকোজ লেবেল চেক করার জন্যই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
  • 2HAD >> টু আওয়ার আফটার ডিনারঃ রাতে খাওয়ার দুই ঘন্টা পর আপনার গ্লুকোজ লেবেল চেক করার জন্য করা হয়ে থাকে।
  • PPBS >> পোস্ট পেন্ডিং ব্লাড সুগার : এটি সাধারণত খাবার দুই ঘন্টা পর ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল চেক করার উপায়।

কখন ডাক্তার দেখানো উচিত


কখন ডাক্তার দেখানো উচিত  সে সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমত অস্বাভাবিক উপসর্গগুলো দেখা মাত্রই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত । এছাড়াও আরো যে সকল বিষয়গুলো জেনে রাখা উচিত তা হল
  • গর্ভকালীন সময়ে আপনার অনাগত শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রথম থেকেই ডাক্তারের পরামর্শে থাকুন।
  • বাবা-মা ,ভাই-বোন কারো ডায়াবেটিস থাকলে সর্বদাই সচেতন থাকুন প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেন।
  • যখন আপনি স্থূলকার এবং আপনার বয়স ত্রিশ বছর তখন অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
  • সর্বোপরি উপরোক্ত আলোচনায় আমরা যে লক্ষণ সমূহ আলোচনা করেছি সেরকম কোন লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়


আমরা বর্তমানে ডায়াবেটিসের মত মারাত্মক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার জীবন যাত্রার মানকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কথায় বলে "প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম"। সাধারণত যাদের অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ কোলেস্টেরল, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কিংবা যারা পারিবারিক ইতিহাসের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা আপনার ডায়াবেটিসকে বিলম্বিত করবে অথবা একেবারেই থামিয়ে দিতে সক্ষম। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে
  • ওজন কমানো ।
  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা।
  • ধূমপান পরিহার করুন।

ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে এর প্রভাব


ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে এর প্রভাব খুবই মারাত্মক। যখন কোন ব্যাক্তি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন তখন মানবদেহে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে মানবদেহের বিভিন্ন কোষে গ্লুকোজকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। তখন এই গ্লুকোজ রক্তে জমা হতে থাকে ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে। আর অতিরিক্ত এ গ্লুকোজ  সাধারণত প্রসাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হতে থাকে। এ কারণে ডায়াবেটিস ব্যাক্তি ঘনঘন প্রসাব করতে থাকেন ।

আরো পড়ুনঃ  ধূমপান ছাড়ার ১৫ কৌশল

যখন একজন ডায়াবেটিস রোগীর প্রসাবের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবে তার তৃষ্ণার পরিমাণও বাড়তে থাকে। অপরদিকে যখন রোগী ঘন ঘন প্রসাব করতে থাকেন তখন স্বাভাবিকভাবে তার গ্লুকোজের পরিমাণও প্রসাবের সাথে বের হয়ে গ্লুকোজ লেবেল কমতে থাকে। ফলে রোগী প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনে ব্যর্থ হন এবং  রোগী বেশি দুর্বল হয়ে পড়েন বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান।এক্ষেত্রে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এক্ষেত্রে রোগী যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে থাকেন তবে রোগীর রক্তনালী , কিডনি ,চোখ , স্নায়ু এমনকি হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ নানা জটিল রোগে ভুগতে থাকেন। এমনকি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে রোগীর বিভিন্ন অঙ্গহানি হয়ে থাকে। রোগীর বিভিন্ন অঙ্গে বিশেষ করে হাত ও পায়ে সামান্য আঘাত বা ছোট ঘা থেকে পচন রোগ দেখা দেয় পরবর্তীতে সে অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়। যা তাকে সারা জীবনের জন্য একটি অঙ্গের ঘাটতি নিয়ে কাটাতে হয়। ফলে তার জীবনে চরম হতাশা ও দুঃখ নেমে আসে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা


ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন অপর্যাপ্ত হারে বেড়েই চলেছে। সারা পৃথিবীতে প্রায় প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন করে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আফ্রিকার দেশগুলোর পর ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দিন দিন  সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইডিএফ এর ২০২১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে >> ১৯৮০ সালে ১১ কোটি। শতকরা হিসেবে  (৫%) পাঁচ শতাংশেরও কম।
  • ২০১৪ সালে সেটা বেড়ে হয় ৪২ কোটিরও বেশি। শতকরা হিসেবে ৮.৫ % (শতাংশ)।
  • বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৪২ কোটি ২০ লক্ষের কাছাকাছি।
  • ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন বলছে >> ডায়াবেটিসে আক্রান্তের প্রায় ৮০% (শতাংশ)। মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের জনগণ যেখানে খুব দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটেছে। সংস্থাটি বলছে ২০১৬ সালের ডায়াবেটিসের কারণে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় ।

digital-dream-it


  • জাতীয় জনসংখ্যা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এর জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগের সংখ্যা 1 কোটি ১০ লক্ষ এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সের রোগীর সংখ্যা ২৬ লাখ এবং ৩৫ বছরের বেশি রোগীর সংখ্যা ৮৪ লক্ষ।
  • ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস স্লোগানকে কেন্দ্র করে 1956 সালের 28 ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় যার হসপিটাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোই ৪৫ লাখের বেশি নিবন্ধিত স্বাস্থ্যকর্মী কর্মরত।

বর্তমানে বাংলাদেশের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষই জানে না যে সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতামত অনুযায়ী 2045 সালে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দেড় কোটিতে দাঁড়াবে যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায়


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের গোপন ফর্মুলা
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা 
  • মানসিক চাপমুক্ত থাকা
  • ঘুমের মাত্রা ঠিক রাখা ও পর্যাপ্ত পানি পান করা
  • বয়স ও প্রাকৃতিক পরিবর্তন
  • প্রতি বেলার খাবার নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খান
  • যে সকল খাবার পরিত্যাজ্য

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায় এর অন্যতম উপায় হল নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা । কথায় বলে "সুস্থ দেহ সুস্থ মন"। যদি আপনার দেহের ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে পারেন তবে শুধু ডায়াবেটিস নয় বিভিন্ন প্রকার রোগ বা প্রায় সব ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর ওজন রাখতে পারলে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ঝুঁকে ৭০% কমে যায়।

নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা 

শরীরচর্চা ইনসুলের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে ।আপনার দেহের ইনসুলিন মাত্রাকে সঠিকভাবে বজায় রাখতে দৈনিক কমপক্ষে একটানা 30-40 মিনিট হাটুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যায়াম করার যত পদ্ধতি আছে তার মধ্যে হাঁটাহাঁটি সব চেয়ে ভালো উপায়। এছাড়াও জগিং, সাইক্লিন বা যোগ ব্যায়ামের মতো ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করতে পারেন।

মানসিক চাপমুক্ত থাকা

নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মানসিক চাপ মুক্ত রাখা ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায় এর আরো একটি অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও অস্থিরতা মানবদেহের হরমোনাল অবস্থাকে প্রভাবিত করে যা ডায়বেটিস বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এটা শুধু ডায়াবেটিস নয় অন্য যেকোনো স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরী । 

ডায়াবেটিসহ নানা রোগ থেকে মুক্তি পেতে মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। তীব্র মাথাব্যথা ,ক্যান্সার বা অন্যান্য যে কোন মারাত্মক ভয়াবহ রোগের প্রধান কারণ স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। এ থেকে মুক্তি পেতে নানা কৌশল বা যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। তাই আসুন সুস্থ জীবন যাপন করতে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে মানসিক ভাবে চাপ মুক্ত রাখি।

ঘুমের মাত্রা ঠিক রাখা ও পর্যাপ্ত পানি পান করা 

পর্যাপ্তঘুম মানবদেহে ইনসুনের মাত্রাকে সঠিক রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে সুতরাং প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস বজায় রাখতে  হবে।

বয়স ও প্রাকৃতিক পরিবর্তন 

বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানবদেহের ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতা বা সক্ষমতা কমতে থাকে যা সাধারণত টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে।

খাদ্যঃ প্রতি বেলার খাবার নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খান

স্বাস্থ্যকর ও সুঠাম শারীরিক গঠনের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ  কারণ উচ্চ মাত্রার প্রোটিন যুক্ত খাবার অল্প পরিমাণ খেলেই ক্ষুধা নিবারণ হয় এবং দেহকে শক্তিশালী ও মেদ মুক্ত করে তোলা যায় এসব খাবার সম্বন্ধে জানা থাকলে ওজন ও রোগ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সহজতর হয়ে যায়। যেমন বাদাম, ব্রকলি, ছোলা, নারকেল, পনির, ডিম, ডাল, দুধ, মটরশুঁটি ইত্যাদি
সালাদ 
ডায়াবেটিস রোগীগণ প্রতিদিন দুপুরে ও রাতে খাবার আগে সালাত খান। সালাতের আইটেমে শসা ,গাজর ,টমেটো ,পেঁয়াজ ,রসুন ,লেটুস পাতা ,ধনেপাতা ব্রকলি ইত্যাদি রাখুন। একটি সালাতে এক চা চামচ সাদা ভিনেগার যুক্ত করুন কারণ ভিনেগার সুগার শোষণে সহায়ক।
কফি পান 
যারা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা প্রতিদিন দুই কাপ চিনি ছাড়া কফি পান করুন তাতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৯% কমে আসবে। কেননা কফিতে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে।

digital-dream-it
দারুচিনি, কালোজিরা, মেথি ও আমলকি
ডায়াবেটিসের মাত্রা বা ঝুকিকে কমাতে নিয়মিত দারুচিনি, কালোজিরা, মেথি, আমলকি ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান খান। দারুচিনি এর প্রাকৃতিক সক্ষমতায় আপনার অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে এনে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে ঠিক রাখতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে দারুচিনি ৪৮ % ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। এছাড়াও কালোজিরা, মেথি, আমলকি রক্তের শর্করা মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে  মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
পূর্ণশস্য জাতীয় খাদ্য গ্রহণ
ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায় এর অন্যতম উপায় হলো পূর্ণশস্য জাতীয় খাদ্য গ্রহণ। কারণ পূর্ণশস্য জাতীয় খাদ্যগুলো উচ্চ আঁশযুক্ত হওয়ায় অতি সহজেই ক্ষুধা নিবারণ করে এবং দীর্ঘক্ষণ নিজেকে শক্তিশালী করে রাখতে সহায়তা করে। পূর্ণ শস্যজাতীয় খাদ্য রক্তের সুগারের মাত্রা ,কোষ্ঠকাঠিন্য ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। সকালের নাস্তায় ওটমিল ,ভুট্টা ,বাজরা ,বার্লি ,ব্রাউন রাইস,  সিয়া সিড ইত্যাদিকে রাখতে পারেন।

যে সকল খাবার পরিত্যাজ্য

ফাস্টফুড
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবেন যেভাবে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার খাবার দাবার নিয়ন্ত্রণে আনা। বিশেষজ্ঞদের মতে অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট, আইসক্রিম, মিষ্টি, ফাস্টফুড, পোলাও, বিরিয়ানি, রেডমিট এর মত ভারী খাবার পরিহার করা উচিত ।

ডায়াবেটিসহ অন্যান্য অনেক রোগ থেকে বাঁচতে আপনার হাতের কাছে পাওয়া এসব লোভনীয় খাবার একেবারেই পরিহার করুন। এসব ফাস্টফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের ফলে স্থূলতা ,উচ্চ কোলেস্টেরল ,ওজনে সমস্যা সহ হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এ সকল খাবার ইনসুলিনের মাত্রায়ও ব্যাঘাত ঘটায়।

digital-dream-it



ধূমপান ও মদ্যপান
ধূমপান ও মদ্যপান অভ্যাসের কারণে আপনার ডায়াবেটিস ছাড়া আরো নানা রোগের কারণ হতে পারে আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে না চান তবে আজই ধূমপান পরিহার করুন। ধূমপান ডায়াবেটিস ও ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবেন যেভাবে তার বিস্তার আলোচনা করা হয়েছে। সর্বোপরি ডাক্তার গন ডায়াবেটিসের ম্যানেজমেন্ট হিসাবে উল্লেখ করেন 3 D কে।
1st D  = Discipline. শৃঙ্খলা
2nd D = Diet. খাবার দাবার
3rd D = Drug. ঔষধ

নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি ও নরমাল ভ্যালু


নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি ও নরমাল ভ্যালু লেভেল জেনে ঘরে বসে আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা অতিসহজেই নির্ণয় করতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায় সম্বন্ধে জেনে অতি সহজে আপনি আপনার ডায়াবেটিসকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন । ডায়াবেটিক বা নন ডায়াবেটিস উভয়ের জন্যই এই নরমাল ভ্যালুগুলো জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করি। তন্মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক মাত্রা কত তা জানা  একান্ত জরুরী।
  • FBS (FASTING BLOOD SUGAR: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা সাধারণত এটি রাতে খাবার খাওয়ার 8 থেকে 10 ঘণ্টা পর সকালে খালি পেটে নমুনা দিতে হয়) >>5.6-6.9 mmol\L .
  • 2HABF (2 HOUR AFTER BREAKFAST: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত সকালে নাস্তা খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে করা হয়ে থাকে) >>up to 7.8 mmol\L .
  • 2HAL (2 HOUR AFTER LOUNCH: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত দুপুরে খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে করা হয়ে থাকে) >>up to 7.8 mmol\L .
  • 2HAD (2 HOUR AFTER DINNER:  এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত রাতে খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে করা হয়ে থাকে) >>up to 7.8 mmol\L .
  • RBS / RBG (RANDOM BLOOD SUGAR/ RANDOM BLOOD GLUCOSE: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা খাবার খাওয়া বা না খাওয়ার উপর নির্ভর করে না যে কোন সময় করা যায় এই রেজাল্টকে বর্ডার লাইন বলে) >>up to 7.8 mmol\L .
  • PPBS (POST PANDING BLOOD SUGAR: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত খাবার খাওয়ার ঠিক দুই ঘন্টা পরে করা হয়ে থাকে) >>5.0-9.0mmol\L .
  • FPG (FASTING PLASMA GLUCOSE: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত রাতে খাওয়ার আট ঘন্টা পর সকালে নাচ তার আগে নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে এবং শিরা থেকে রক্ত নিয়ে লেগে পরীক্ষা করা হয়) >>5.0-7.2 mmol\L .
  • HbA1c (HEAMOGLOBIN A1c: এই টেস্টের মাধ্যমে সাধারণত আপনার গত দুই তিন মাসের ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল অনুমান করা যায় একটি টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু ডায়াবেটিস নির্ণয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ) >> 6.5% .
  • OGTT (ORAL GLUCOSE TOLERANCE TEST: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রি-ডাইবেটিস এবং গর্ভ কালীন ডাইবেটিস নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষাটি করা হয়ে থাকে এই পরীক্ষাটি করার জন্য প্রথমে আপনার শিরা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে অতঃপর ২৫%  ৭৫ মিলিগ্রাম গ্লুকোজ 250 মিলি লিটার পানিতে গুলিয়ে খাওয়ানো হবে এর ১ ঘণ্টা পরে আরো একবার নমুনা সংগ্রহ করা হবে এবং এরও এক ঘন্টা পর আরও একবার নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে) >>200mg/dL .

শিশুদের ক্ষেত্রে: 

ছয় বছরের নিচে 
খাবারের আগে: 5.5-10.0 mmol/L .
খাবারের পরে: less than 10.0 mmol/L .
৬ থেকে ১২ বছর
খাবারের আগে: 5.0 -10.0 mmol/L .
খাবারের পরে:less than 10.0 mmol/L .
১৩ থেকে ১৯ বছর
খাবারের আগে: 5.0 -7.2 mmol/L .
খাবারের পরে:less than 10.0 mmol/L .
ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক মাত্রা কত তা জানা একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত জরুরী।

ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায় | শেষ কথা


ডায়াবেটিসের মত একটি মারাত্মক রোগ নিয়ে আমরা বিস্তর আলোচনা করেছি। কাঠকে নষ্ট করার জন্য যেমন ঘুণ যথেষ্ট। আমাদের শরীর কে নিঃশেষ করার জন্য ডায়াবেটিসও একই ভূমিকা পালন করে। সুতরাং ডায়াবেটিসের মত এমন একটি মারাত্মক রোগ সম্বন্ধে সামান্য সচেতন করতে পারাই আমরা বেশ আনন্দিত - যদি আপনাদের সামান্যতম উপকার হয়ে থাকে। 

ডায়াবেটিস: কি, প্রকার, লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তথাপি যদি কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে আপনার কমেন্টটি করুন। আশা করি পরবর্তী কোনো লেখার অপেক্ষায় থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url