ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায়
ডায়াবেটিস এমন এক মরণঘাতি রোগ যা আপনার যে কোন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে নিষ্ক্রিয় করতে মোক্ষম ভূমিকা পালন করে। আর এমন এক মরণঘাতী রোগ থেকে আপনাদেরকে সতর্ক করতে আজকের এ আর্টিকেলটি লিখা আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি আপনি ডায়াবেটিস রোগ সম্বন্ধে একটি সঠিক ধারণা পাবেন এবং ডায়াবেটিক রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন। ডায়াবেটিস: কি, প্রকার, লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচীপত্রঃ ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়
- ডায়াবেটিস মেলাইটাস কি?
- মানব দেহে ইনসুলিনের কাজ কি ?
- ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
- ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট বলতে কি বোঝায় ?
- সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গসমূহ
- যারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন
- ডায়াবেটিসের জটিলতা
- ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
- কখন ডাক্তার দেখানো উচিত
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়
- ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে এর প্রভাব কি
- ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা
- ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায়
- ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায় |শেষ কথা
ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায়:-
ডায়াবেটিস মেলাইটাস কি?
ডায়াবেটিস মেলাইটাস বা বহুমূত্র রোগ হল মানব দেহের জন্য গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদি একটি অবস্থা। যখন আমাদের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে মানবদেহে যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয় বা উৎপাদিত ইনসুলিন স্বাভাবিক বা সঠিকভাবে মানবদেহে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে না সেই অবস্থাকেই ডায়াবেটিস মেলাইটাস বলে।
বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যা বর্তমান চিকিৎসা জগতকে বেশ গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। আর তাই এমন ভয়াবহ রোগ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবেন যেভাবে এর সঠিক গাইডলাইন দিতেই আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা। আশা করি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে পড়ে আপনি আপনার মূল্যবান মতামত দিবেন।
মানব দেহে ইনসুলিনের কাজ কি ?
মানব দেহে ইনসুলিনের কাজ কি তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে মূলত ইনসুলিন কি ? ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন যার কাজ মানবদেহের বিভিন্ন কোষে গ্লুকোজকে পৌঁছে দেয়া ।ইনসুলিন অগ্নাশয়ের বিশেষ কোষ দ্বারা তৈরি হরমোন আই-লেটস থেকে তৈরি হয়ে থাকে। সাধারণত আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি তখন তা ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত হয়ে থাকে। অতঃপর এই গ্লুকোজকে ব্যবহার করে মানবদেহ শক্তি সঞ্চার করে।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
- টাইপ ১
- টাইপ ২
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মেলাইটাস
- ম্যাচিউরিটি অনসেট ডায়াবেটিস মেলেইটাস অফ দে ইয়ং
টাইপ ১ ডায়াবেটিস মেলাইটাস
টাইপ ১ ডাইবেটিসের ক্ষেত্রে অগ্নাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে এক্ষেত্রে রোগীর শরীর আর কোন ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। সাধারণত ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস দেখা যায়। এ সকল রোগীদের ইনসুলিন নিতেই হয়। নতুবা রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে অতি দ্রুত রক্তে অম্লজাতীয় বিষক্রিয়াই অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকেন।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলাইটাস
যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম করেন না এরাই মূলত টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী। এ ধরনের রোগী সাধারণত মোটাসোটা বা স্থূলকার হয়। এদের বয়স সাধারণত ৩০ বছরের বেশি হয়ে থাকে। এ ধরনের রোগীরা ইনসুলিন নির্ভরতা নয় বরং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন তৈরি করতে পারে তবে তার প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য বা যা তৈরি হয় তা শরীরে ব্যবহারে অকার্যকর বা ব্যর্থ হয়। নিয়মিত ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এর মাধ্যমে প্রথমত টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় । অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ বা ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে যে সকল খাবার পরিহার করতে হবে
- মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার বা পানীয়
- ফ্যাট বা চর্বিযুক্ত খাবার
- ঝুঁকি বাড়ায় >সেচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট ,সাদা ভাত ইত্যাদি
- ঝুঁকি কমায় >পলি আনস্যাচুরেটেড ও মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট বলতে কি বোঝায় ?
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট বলতে কি বোঝায় এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। ইনসুলিন কেন দেয়া হয় সে সম্পর্কে তার ধারণা সুস্পষ্ট হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন দিলে ইনসুলিন নিতে চান না।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট মূলত মানবদেহের শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় কিন্তু তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনা। অর্থাৎ শরীরে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সঠিকভাবে কমাতে ব্যর্থ হয়। কোন ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হলে পরবর্তীতে তার টাইপ টু ডায়াবেটিস হয়।
সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গসমূহ
- তৃষ্ণা বৃদ্ধি একে মেডিকেল ভাষায় পলিডিপসিয়া (Polydipsia) বলে।
- ক্ষুধার চাহিদা বেড়ে যাওয়া একে মেডিকেল ভাষায় পলিফেজিয়া (Polyphagia) বলে।
- ঘন ঘন প্রসাব। দিনে ৮ বার বা রাতে ঘুমানোর মাঝে একবারের বেশি প্রয়োজন হয় । একে মেডিকেল ভাষায় পলি ইউরিয়া (Polyuria) বলে।
- ক্লান্তিবোধ ও ঘুম ঘুম বা ঘোর ঘোর ভাবা আশা।
- চোখে কম দেখা ।
- ওজন কমে যাওয়া ।
- মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া।
- চামড়ায় শুষ্ক খসখসে ও চুলকানি ভাব বৃদ্ধি পাওয়া।
- বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
- ক্ষত নিরাময় বা ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় নেয়া।
- হাত বা পায়ে অসাড়তা বা শিহরণ অনুভূতি।
- ত্বক বা জেনেটিক অঙ্গে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘন ঘন বা বারবার হওয়া ।
- গর্ভাবস্থায় সাধারণত লক্ষণ গুলো তেমন প্রকাশ পায় না। গর্ভধারণের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহে ডাক্তারগন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে দেন।
- প্রদাহ জনিত রোগে বারবার আক্রান্ত হওয়া।
- এছাড়াও আরো একটি স্বতন্ত্র লক্ষণ হল ঘাড় ,কুঁচকি ,বগলের চারপাশের ত্বক কালো হয়ে যাওয়া।
যারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন
- প্রসাব করার প্রয়োজনীয়তা হঠাৎ ও প্রবাল ভাবে আসে যার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে ।
- ৪০ বছর বয়সে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার লোকজনের মধ্যে ২৫ বছর বয়সেও টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে।
- যাদের পিতা-মাতা ,ভাই বোনের ডায়াবেটিস আছে তারা জেনেটিক ভাবে যে কোন বয়সেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন বা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
- বয়স ও একটা প্রধান ফ্যাক্টর। বয়স ৩০ এরপরে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সব থেকে বেশি থাকে।
- উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও মদ্যপান ডায়াবেটিসের জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায় ।
ডায়াবেটিসের জটিলতা
- চোখের সমস্যা > চোখে কম দেখা বা ঝাপসা দেখা। এমনকি চোখে ছানিও পড়তে পারে। একে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বলে ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা বডি ইমিউনিটি কমে যায়। ফলে যে কোন রোগে সংক্রমণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।
- স্নায়ু চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয় একে নিউরোপ্যাথি বলে।
- ডায়াবেটিস নেপ্রোপ্যাথি বা কিডনির সমস্যা , দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ শর্করা ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে হতে পারে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে রক্তনালীর ক্ষতি হয়। রক্তে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে হার্ট এটাক বা স্ট্রোকের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়।
- স্নায়ুর ক্ষতিতে পায়ের সংবেদন লোপ পায়। ফলে পায়ে ব্লাড চলাচল ও কমে যায়। এক পর্যায়ে পায়ে কোন ক্ষত বা ইনফেকশন হলে তা সারতে প্রচুর সময় নেই। অনেক সময় অঙ্গ হানির ঘটনাও ঘটে থাকে।
- মাড়ির রোগ বা মুখের অন্যন্য সমস্যাও হতে পারে।
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যৌন সমস্যা ও নির্দিষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকেন।
ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
- FBS >> ফাস্টিং ব্লাড সুগারঃ সাধারণত এ পরীক্ষা সকালে খালি পেটে করা হয়ে থাকে এজন্য আপনাকে কমপক্ষে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে।
- FPG >> ফাস্টিং প্লাজমা গ্লুকোজঃ এ পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে কমপক্ষে চার ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে।
- HbA1c >> হিমোগ্লোবিন এ ওয়ান সিঃ পরীক্ষার মাধ্যমে গত তিন মাসের গড় গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
- RBS >> রেনডম ব্লাড সুগারঃ তাৎক্ষণিক ব্লাড সুগার চেক করার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
- OGTT >> ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্টঃ এ টেস্ট করার জন্য কমপক্ষে ৮ ঘন্টা না খেয়ে থাকবেন। প্রথমবার স্যাম্পুল দেয়ার পর ৭৫ মিলিগ্রাম গ্লুকোজ ২00 থেকে ৩00 মিলিলিটার পানিতে গুলিয়ে খাবেন। অতঃপর দুই ঘন্টা পরে পুনরায় স্যাম্পল দিবেন এই দুই ঘন্টা আপনি পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন হাঁটাচলা বা অন্য কোন কিছু খাওয়া যাবে না এমনকি সিগারেটও নয়। এক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা টেস্ট দেয়ার আগের তিনদিন আপনি স্বাভাবিক খাবার দাবার খাবেন । এই টেস্টের রিপোর্ট আপনার গত দুই - তিন মাসের গ্লুকোজের একটি গড় রিপোর্ট দেখাবে।
- 2HABF>>টু আওয়ার আফটার ব্রেকফাস্টঃ সকালে নাস্তার দুই ঘন্টা পরে আপনার গ্লুকোজ লেবেল কেমন থাকে তা দেখার জন্য এ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
- 2HAL >> টু আওয়ার আফটার লাঞ্চঃ দুপুরে খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে আপনার গ্লুকোজ লেবেল চেক করার জন্যই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
- 2HAD >> টু আওয়ার আফটার ডিনারঃ রাতে খাওয়ার দুই ঘন্টা পর আপনার গ্লুকোজ লেবেল চেক করার জন্য করা হয়ে থাকে।
- PPBS >> পোস্ট পেন্ডিং ব্লাড সুগার : এটি সাধারণত খাবার দুই ঘন্টা পর ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল চেক করার উপায়।
কখন ডাক্তার দেখানো উচিত
- গর্ভকালীন সময়ে আপনার অনাগত শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রথম থেকেই ডাক্তারের পরামর্শে থাকুন।
- বাবা-মা ,ভাই-বোন কারো ডায়াবেটিস থাকলে সর্বদাই সচেতন থাকুন প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেন।
- যখন আপনি স্থূলকার এবং আপনার বয়স ত্রিশ বছর তখন অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
- সর্বোপরি উপরোক্ত আলোচনায় আমরা যে লক্ষণ সমূহ আলোচনা করেছি সেরকম কোন লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়
- ওজন কমানো ।
- খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- ধূমপান পরিহার করুন।
ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে এর প্রভাব
ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে এর প্রভাব খুবই মারাত্মক। যখন কোন ব্যাক্তি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন তখন মানবদেহে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে মানবদেহের বিভিন্ন কোষে গ্লুকোজকে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। তখন এই গ্লুকোজ রক্তে জমা হতে থাকে ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে। আর অতিরিক্ত এ গ্লুকোজ সাধারণত প্রসাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হতে থাকে। এ কারণে ডায়াবেটিস ব্যাক্তি ঘনঘন প্রসাব করতে থাকেন ।
আরো পড়ুনঃ ধূমপান ছাড়ার ১৫ কৌশল
যখন একজন ডায়াবেটিস রোগীর প্রসাবের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবে তার তৃষ্ণার পরিমাণও বাড়তে থাকে। অপরদিকে যখন রোগী ঘন ঘন প্রসাব করতে থাকেন তখন স্বাভাবিকভাবে তার গ্লুকোজের পরিমাণও প্রসাবের সাথে বের হয়ে গ্লুকোজ লেবেল কমতে থাকে। ফলে রোগী প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনে ব্যর্থ হন এবং রোগী বেশি দুর্বল হয়ে পড়েন বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান।এক্ষেত্রে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে রোগী যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে থাকেন তবে রোগীর রক্তনালী , কিডনি ,চোখ , স্নায়ু এমনকি হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ নানা জটিল রোগে ভুগতে থাকেন। এমনকি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে রোগীর বিভিন্ন অঙ্গহানি হয়ে থাকে। রোগীর বিভিন্ন অঙ্গে বিশেষ করে হাত ও পায়ে সামান্য আঘাত বা ছোট ঘা থেকে পচন রোগ দেখা দেয় পরবর্তীতে সে অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়। যা তাকে সারা জীবনের জন্য একটি অঙ্গের ঘাটতি নিয়ে কাটাতে হয়। ফলে তার জীবনে চরম হতাশা ও দুঃখ নেমে আসে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে >> ১৯৮০ সালে ১১ কোটি। শতকরা হিসেবে (৫%) পাঁচ শতাংশেরও কম।
- ২০১৪ সালে সেটা বেড়ে হয় ৪২ কোটিরও বেশি। শতকরা হিসেবে ৮.৫ % (শতাংশ)।
- বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৪২ কোটি ২০ লক্ষের কাছাকাছি।
- ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন বলছে >> ডায়াবেটিসে আক্রান্তের প্রায় ৮০% (শতাংশ)। মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের জনগণ যেখানে খুব দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটেছে। সংস্থাটি বলছে ২০১৬ সালের ডায়াবেটিসের কারণে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় ।
- জাতীয় জনসংখ্যা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এর জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগের সংখ্যা 1 কোটি ১০ লক্ষ এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সের রোগীর সংখ্যা ২৬ লাখ এবং ৩৫ বছরের বেশি রোগীর সংখ্যা ৮৪ লক্ষ।
- ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস স্লোগানকে কেন্দ্র করে 1956 সালের 28 ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় যার হসপিটাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোই ৪৫ লাখের বেশি নিবন্ধিত স্বাস্থ্যকর্মী কর্মরত।
ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের 7টি ঘরোয়া উপায়
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা ।
- মানসিক চাপমুক্ত থাকা।
- ঘুমের মাত্রা ঠিক রাখা ও পর্যাপ্ত পানি পান করা।
- বয়স ও প্রাকৃতিক পরিবর্তন।
- প্রতি বেলার খাবার নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খান।
- যে সকল খাবার পরিত্যাজ্য।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা
মানসিক চাপমুক্ত থাকা
ঘুমের মাত্রা ঠিক রাখা ও পর্যাপ্ত পানি পান করা
বয়স ও প্রাকৃতিক পরিবর্তন
খাদ্যঃ প্রতি বেলার খাবার নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খান

যে সকল খাবার পরিত্যাজ্য
নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি ও নরমাল ভ্যালু
- FBS (FASTING BLOOD SUGAR: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা সাধারণত এটি রাতে খাবার খাওয়ার 8 থেকে 10 ঘণ্টা পর সকালে খালি পেটে নমুনা দিতে হয়) >>5.6-6.9 mmol\L .
- 2HABF (2 HOUR AFTER BREAKFAST: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত সকালে নাস্তা খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে করা হয়ে থাকে) >>up to 7.8 mmol\L .
আরো পড়ুনঃ ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পায়ে টান ধরে কেন
- 2HAL (2 HOUR AFTER LOUNCH: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত দুপুরে খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে করা হয়ে থাকে) >>up to 7.8 mmol\L .
- 2HAD (2 HOUR AFTER DINNER: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত রাতে খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে করা হয়ে থাকে) >>up to 7.8 mmol\L .
- RBS / RBG (RANDOM BLOOD SUGAR/ RANDOM BLOOD GLUCOSE: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা খাবার খাওয়া বা না খাওয়ার উপর নির্ভর করে না যে কোন সময় করা যায় এই রেজাল্টকে বর্ডার লাইন বলে) >>up to 7.8 mmol\L .
- PPBS (POST PANDING BLOOD SUGAR: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত খাবার খাওয়ার ঠিক দুই ঘন্টা পরে করা হয়ে থাকে) >>5.0-9.0mmol\L .
- FPG (FASTING PLASMA GLUCOSE: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত রাতে খাওয়ার আট ঘন্টা পর সকালে নাচ তার আগে নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে এবং শিরা থেকে রক্ত নিয়ে লেগে পরীক্ষা করা হয়) >>5.0-7.2 mmol\L .
- HbA1c (HEAMOGLOBIN A1c: এই টেস্টের মাধ্যমে সাধারণত আপনার গত দুই তিন মাসের ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল অনুমান করা যায় একটি টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু ডায়াবেটিস নির্ণয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ) >> 6.5% .
- OGTT (ORAL GLUCOSE TOLERANCE TEST: এটি মানব দেহের শর্করা পরিমাপের একটি পরীক্ষা এটি সাধারণত টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রি-ডাইবেটিস এবং গর্ভ কালীন ডাইবেটিস নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষাটি করা হয়ে থাকে এই পরীক্ষাটি করার জন্য প্রথমে আপনার শিরা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে অতঃপর ২৫% ৭৫ মিলিগ্রাম গ্লুকোজ 250 মিলি লিটার পানিতে গুলিয়ে খাওয়ানো হবে এর ১ ঘণ্টা পরে আরো একবার নমুনা সংগ্রহ করা হবে এবং এরও এক ঘন্টা পর আরও একবার নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে) >>200mg/dL .
শিশুদের ক্ষেত্রে:
ছয় বছরের নিচেখাবারের আগে: 5.5-10.0 mmol/L .
খাবারের পরে: less than 10.0 mmol/L .
খাবারের পরে:less than 10.0 mmol/L .
খাবারের পরে:less than 10.0 mmol/L .
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url