ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান
ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান লাগার ঘটনার সাথে কম বেশি সকলেরই অভিজ্ঞতা আছে। সেই টান লাগার অল্প সময়টুকুই যে কি অসহ্যকর ব্যথা ও যন্ত্রণা তা সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়। তবে এ ব্যথা নিজে থেকেই সেরে যায়।
সূচীপত্রঃ পায়ের মাংশ পেশীতে টান ধরার কারণ কি?
- ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান
- লেগ ক্রাম্প বা পায়ে টান লাগা কি ?
- লেগ ক্রাম্পের স্থায়িত্বকাল ও কখন হয়
- যে সকল মাসলে লেগ ক্রাম্প হয়
- লেগ ক্রাম্প হওয়ার কারণ সমূহ
- কিছু কিছু রোগের কারণে পায়ে টান লাগতে পারে
- পায়ে যেন টান না লাগে তার ঘরোয়া উপায়
- পায়ে টান লাগা থেকে প্রতিকার পেতে
- পায়ের রগে টান লাগলে কি ওষুধ খেতে হবে
- রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পায়ে টান লাগে কেন :পরিশেষে
ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান
পায়ের মাংসপেশিতে টান ধরার কারণ কি তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। আমরা আপনাকে খুব সহজেই কিছু খাদ্যাভ্যাস ও বাসায় কিছু ব্যায়াম এর মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করতে সহযোগিতা করব। যদি আপনার লেগ ক্রাম্প বা মাসলে টান এ ঘটনার সাথে কোন ভাবে সম্পৃক্ততা থেকে থাকে তবে লক্ষ্য করবেন আপনার স্টেসের সাথে এটি কতটা ওতপ্রতভাবে জড়িত। যখন আপনি খুব বেশি পরিশ্রম করেন ,হাঁটেন কিংবা ব্যায়াম করেন তখন পায়ে প্রচুর চাপ পড়লে পায়ে টান লাগার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।
লেগ ক্রাম্প বা পায়ে টান লাগা কি ?
লেগ ক্রাম্প বা পায়ে টান লাগা মুলত পায়ের কোন একটি পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ পায়ের কোন একটি পেশী যখন শক্ত হয়ে যায় তখন একে লেগ ক্রাম্প বলে। যাকে আমরা পায়ে টান লাগা বলি। এটি সাধারণত রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে হয়ে থাকে এছাড়াও দিনের যেকোনো সময় ও হতে পারে। সেখানে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং সেই পাকে নড়াচড়া করা ,হাঁটা বা দাঁড়ানো ইত্যাদি অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ পায়ের কার্যকারিতা তখন শূন্য। রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পায়ের রগে টান লাগার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ ধূমপান ছাড়ার ১৫ কৌশল
লেগ ক্রাম্পের স্থায়িত্বকাল ও কখন কি কারণে হয়
লেগ ক্রাম্পের স্থায়িত্বকাল ও কখন কি কারণে হয় এটি জানা থাকলে আপনার প্রতিকার ও সাবধান হওয়া খুব সহজ তর হয়ে যাবে। লেগ ক্রাম্প সাধারণত ১০ সেকেন্ড থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যে কোন সময় লেগ ক্রাম্প হওয়ার সম্ভাবন রয়েছে। লেগ ক্রাম্প সাধারণত বিশ্রামের সময় বা রাতে ঘুমানোর সময় বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।
এছাড়াও রাতে বা সকালে বিছানা থেকে উঠতে গিয়েও লেগ ক্রাম্প হয়ে থাকে এবং পেশিতে প্রচন্ড টান অনুভব করেন এবং অসহ্যকর কষ্ট পেতে থাকেন। ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান লাগার সহজ ও সঠিক উপায় সম্পর্কে জানতেই আজকের এই আর্টিকেল।
যে সকল মাসলে লেগ ক্রাম্প হয়
যে সকল মাসলে লেগ ক্রাম্প হয় এ বিষয়ে আপনি আগে থেকেই জেনে থাকলে সে সকল মাসলের নিয়মিত ব্যায়াম করলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সবচেয়ে সহজ। সাধারণত পায়ের পিছনে কাফ মাসুল, এছাড়াও পায়ের পাতা ,উরুর সামনের ও পিছনের মাসুলেও টান লাগতে পারে। যদিও পায়েরের টান অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী তবুও কখনো কখনো টান হওয়ার ব্যথা ২৪ ঘন্টার মত থাকতে পারে। রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পায়ের রগে টান লাগার ব্যথা যে কি অসহ্য তা একমাত্র ভুক্তভোগী ব্যক্তিই বুঝে থাকেন ।
লেগ ক্রাম্প হওয়ার কারণ সমূহ
লেগ ক্রাম্প হওয়ার কারণ ঠিক কোন কারণে তা একেবারেই অজানা। অভিজ্ঞদের কারো কারো মতে এ সমস্যার নির্দিষ্ট কোন কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, শারীরিক সমস্যার সঙ্গে কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়। তন্মধ্যে বয়স বৃদ্ধির সাথে ,গর্ভবতী মহিলাদের এ সমস্যা খুব বেশি হয়ে থাকে, এছাড়াও কিছু কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা শারীরিক সমস্যার কারণেও হয়ে থাকতে পারে বলে অভিজ্ঞদের মতামত। আসুন ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান লাগাসহ মাসল ক্রাম্পের আরো অন্যান্য কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।- পায়ের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের ৫ উপায়
- স্নায়ুর সমস্যা
- রক্ত সঞ্চালন কম থাকা
- শীত বা প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে
- পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন
- গর্ভাবস্থায়
- বয়স ও জেন্ডার
- পজিশনিং
- অলস জীবনযাপন
- ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্যহীনতা
কিছু কিছু রোগের কারণে পায়ে টান লাগতে পারে
-
ডায়াবেটিস মেলাইটাস অ্যান্ড হাইপো-থাইরোডিজম
-
পারকিনসনস ডিজিজ
-
কিডনির সমস্যা
-
ক্যান্সারের চিকিৎসায়
উচ্চ রক্তচাপ
লেগ ক্রাম্প বা পায়ে টান লাগলে করণীয়
- যখন পায়ের মাশলের টান ধরে তখন মাশল শক্ত হয়ে যায় এ থেকে মুক্তি পেতে আক্রান্ত স্থান ও এর চারপাশে আলতো বা হালকাভাবে চার আঙ্গুলের চাপে মেসেজ করুন দেখবেন ধীরে ধীরে মাংসপেশী স্বাভাবিক হয়ে এসেছে এবং ব্যথাও কমে গেছে।
- হট ওয়াটার ব্যাগ এবং বরফের সাহায্যে হট ও কোল্ড সেঁক দিতে পারেন। প্রতি ১০ সেকেন্ড পরপর হট সেক ও কোল্ড সেক পরিবর্তন করে দিতে হবে। এতে ধীরে ধীরে ব্যথা কমে যাবে।
- সারা দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন প্রয়োজনে ডাবের পানি, শরবত ,খাবার স্যালাইনও খেতে পারেন।
- পায়ে টান ধরলে ভারী যে কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন এতে টান ধরা জায়গায় চাপ বাড়বে না বরং ধীরে ধীরে চাপ কমতে থাকবে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। পরবর্তীতে টান বা লেগ ক্রাম্প এমনি এমনি চলে যাবে ।
পায়ে যেন টান না লাগে তার ঘরোয়া উপায়
- কাত হয়ে ঘুমানোর সময় দুই পায়ের মাঝে বালিশ রেখে ঘুমান। চিত হয়ে ঘুমানোর সময় হেটুর নিচে বালিশ নিতে পারেন। এতে ঘুমানোর পজিশন ঠিক থাকে ফলে ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান লাগার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যাবে।
- প্রতিদিন হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে ৩০ মিনিট ধরে পায়ের মাসলে সেঁক দিবেন।
- অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করবেন না। প্রয়োজনে এক ঘন্টা পর পর হাঁটা, বসা ইত্যাদি ভাবে পজিশন চেঞ্জ করবেন।
- কমপক্ষে সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট ধরে হাঁটবেন।
- সব সময় সঠিক মাপের আরামদায়ক জুতা পরিধান করবেন।
- টাইট ফিটিং জামা কাপড় পড়ে রাতে ঘুমাতে যাবেন না।
পায়ে টান লাগা থেকে প্রতিকার পেতে করনীয়
পায়ে টান লাগা থেকে প্রতিকার পেতে নিয়মিত পায়ের মাসলের স্ট্রেচিং করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে কিছু লোককে দুই ভাগে ভাগ করে গবেষণা করেন। যাদের অর্ধেক লোককে স্ট্রেচিং করার জন্য এক ভাগে এবং বাকিদেরকে স্ট্রেচিং থেকে বিরত রাখার জন্য আরেকটি ভাগে ভাগ করে রাখা হয়। এতে স্ট্রেচিং থেকে বিরত থাকা লোকদের থেকে স্ট্রেচিং করা লোকদের মাসল টানের প্রবণতা অনেক কম। স্ট্রেচিং করার কিছু পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হলো> >
- কাপ মাসল স্ট্রেচিং
নিয়মিত কাপ মাসল স্ট্রেচিং করলে মাসল প্রসারিত হয় ফলে মাসল ক্রাম্প হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। দেয়ালে এক হাতের উপর ভর দিয়ে এক পা সোজা এবং এক পা হালকা ভাজ করে কোমরকে সোজা রেখে পায়ের কাপ মাসলের উপর টান পড়ে এমন পদ্ধতিতে দিনে তিনবার প্রতিবার ৩০ সেকেন্ড ধরে কাপ মাসল স্ট্রেচিং করুন। অথবা বসে পা সোজা করে পায়ের আঙ্গুল গুলোকে নিজের দিকে ৩০সেকেন্ড ধরে টানুন দিনে তিনবার ।
- হ্যাম স্ট্রিং স্ট্রিচিং
এক পা সোজা এবং অপর পা ৯০ ডিগ্রিতে রেখে ভাজ হওয়া হেটুতে দুই হাতে ভর দিয়ে মাথাকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিতে হবে। কোমর সোজা করে সামনের দিকে তাকাতে হবে নিচের দিকে তাকালে ব্যায়াম কার্যকরী হবে না।
স্ট্রিচিং ছাড়াও আরও যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া খুব জরুরীঃ->
- পানি পানে সতর্কতা
প্রত্যেক মানুষের পানি পানে সতর্কতা হওয়া খুবই জরুরী। শরীরে পানির অভাব হলে মাংসপেশির কার্যকারিতায় প্রভাবিত হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। দিনে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ গ্লাস প্রত্যেক সুস্থ মানুষের পানি পান করা উচিত। আবহাওয়া ভেদে এবং শারীরিক পরিশ্রমের কারণে বা কারো কারো বেশি ঘাম হয় সে ক্ষেত্রে পানির পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
- ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করা
- লবণের পরিমাণে সতর্কতা
পায়ের রগে টান লাগলে কি ওষুধ খেতে হবে
পায়ের রগে টান লাগলে কি ওষুধ খেতে হবে এ প্রশ্ন সবার মনে। প্রথমত আপনি পায়ে ঠান্ডা সেক এবং পরবর্তীতে হালকা গরম সেক দিতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন আপনার শরীরের ডিহাইড্রেরেশন বা পানিশূন্যতা কমাতে খাবার স্যালাইন,ডাব,বিভিন্ন শরবত বা জুস এবং ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার বা পানীয় খেতে পারেন। খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়লে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা আইবু প্রোফেন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। মনে রাখবেন অবশ্যই এর সাথে এন্টি আলসারেন্ট ওষুধ গ্রহণ করবেন।
ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান :পরিশেষে
যদিও ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান লাগা কোন মারাত্মক সমস্যা নয় তবুও একে মোটেও অবহেলা বা গাফিলতি করবেন না। কারণ এ থেকে অনেক খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে থাকবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url